ফেব্রুয়ারী মাসের সবজি চাষ

ফেব্রুয়ারি শীতের শেষ মাস। এ মাসে প্রচুর সবজি চাষ হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে মোটামুটি শীতকালীন আবহাওয়া থাকে। জানুন ফেব্রুয়ারী মাসে কি কি সবজি চাষ কার যায়।

জুলাই মাসের সবজি চাষ

ফেব্রুয়ারি মাস বসন্তের বাগান হিসাবেও পরিচিত। এই সময় বাইরের বায়ুমণ্ডল ঠান্ডা থাকে। ফেব্রুয়ারি শীতের শেষ মাস।

এ মাসে প্রচুর সবজি চাষ হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে মোটামুটি শীতকালীন আবহাওয়া থাকে। 

বাংলার শীত ক্ষণস্থায়ী হলেও কনকনে শীতের হাওয়ার সাথে সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মাঝে মাঝে সৃষ্ট শৈত্যপ্রবাহ শীতের তীব্রতাকে আরো বাড়িয়ে দিয়ে যায়।

এ প্রতিকূলতার মধ্যেও আমাদের কৃষকভাইদের মাঠে কাজ করে যেতে হয় । কেননা এ সময়টা কৃষির এক ব্যস্ততম সময়।

ফেব্রুয়ারী মাসে যে সকল সবজি চাষ করা যায় – বিস্তৃত মটরশুটি, গাজর, আগাম বিটরুট, লেটুস, সবুজ সালাদ এর পেঁয়াজ, মটর, মূলা, পালং শাক, গ্রীষ্মকালীন বাঁধাকপি, রসুন, শ্যালটস, প্রারম্ভিক আলু, শসা, টমেটো বীজ, মটর, তুলসী, ব্রাসিকাস, ফুলকপি, মিষ্টি মরিচ।

এছাড়াও ফেব্রুয়ারী মাসে বিভিন্ন শাক সবজি চাষ করা যায়। আজ আমরা ফেব্রুয়ারী মাসের সবজি চাষ নিয়ে আলোচনা করবো।

তাই আসুন আমরা সংক্ষেপে জেনে নিই ফেব্রুয়ারী মাসে কৃষিতে করণীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো।

আরোও পড়ুন – কোন মাসে কোন সবজি চাষ করতে হয় | সবজি চাষ পদ্ধতি

১. বোরো ধান

ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। ধানের চারা রোপণের ১৫- ২০ দিন পর প্রথম কিস্তি, ৩০-৪০ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তি এবং ৫০-৫৫ দিন পর শেষ কিস্তি হিসেবে ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।

বোরো ধানে নিয়মিত সেচ প্রদান, আগাছা দমন, বালাই ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য পরিচর্যা করতে হবে। রোগ ও পোকা থেকে ধান গাছকে বাঁচাতে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারেন।

এ ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ, আন্তঃপরিচর্যা, যান্ত্রিক দমন, উপকারী পোকা সংরক্ষণ, ক্ষেতে ডালপালা পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করা, আলোর ফাঁদ এসবের মাধ্যমে ধানক্ষেত বালাই মুক্ত করতে পারেন।

এভাবে রোগ ও পোকার আক্রমণ প্রতিহত করা না গেলে শেষ উপায় হিসেবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সঠিক বালাইনাশক, সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।

২. গম

গমের জমিতে যেখানে ঘনচারা রয়েছে তা পাতলা করে দিতে হবে। গম গাছ থেকে যদি শিষ বেড় হয় বা গম গাছের বয়স ৫৫-৬০ দিন হয় তবে জরুরিভাবে গম ক্ষেতে একটি সেচ দিতে হবে।

এতে গমের ফলন বৃদ্ধি পাবে। ভালো ফলনের জন্য দানা গঠনের সময় আরেকবার সেচ দিতে হবে। গম ক্ষেতে ইঁদুর দমনের কাজটি সকলে মিলে একসাথে করতে হবে।

৩. ভুট্টা

ভুট্টা ক্ষেতে গাছের গোড়ার মাটি তুলে দিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্যান্য কারণে এসময় ভুট্টা ফসলে আর্মিওয়ার্ম, ফল আর্মিওয়ার্ম ইত্যাদি পোকার আক্রমণ দেখা যায়।

আক্রান্ত গাছ থেকে লার্ভাগুলো হাত দ্বারা সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলতে হবে। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে স্পেনোসেড (ট্রেসার ৪৫এসসি ০.৪ মিলি./লিটার) বা এবামেকটিন বেনজোয়েট ( প্রোক্লেম ৫ এসজি বা সাহাম ৫ এসজি ১ গ্রাম/লিটার) বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

৪. আলু

আলু ফসলে নাবি ধসা রোগ দেখা দিতে পারে। সে কারণে স্প্রেয়িং শিডিউল মেনে চলতে হবে।

মড়ক রোগ দমনে দেরি না করে ২ গ্রাম এক্সট্রামিল অথবা ডায়থেন এম ৪৫ অথবা সিকিউর অথবা মেলুডি ডুও প্রতি লিটার পানির সাথে মিশিয়ে নিয়মিত স্প্রে করতে হবে।

মড়ক লাগা জমিতে সেচ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। তাছাড়া আলু ফসলে মালচিং, সেচ প্রয়োগ, আগাছা দমনের কাজগুলোও করতে হবে।

আলু গাছের বয়স ৯০ দিন হলে মাটির সমান করে গাছ কেটে দিতে হবে এবং ১০ দিন পর আলু তুলে ফেলতে হবে।

আলু তোলার পর ভালো করে শুকিয়ে বাছাই করতে হবে এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।

আরোও পড়তে পারেন – আলু সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ পদ্ধতি

৫. তুলা

তুলা সংগ্রহের কাজ এ মাস থেকেই শুরু করতে হবে। তুলা সাধারণত পর্যায়ে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।

শুরুতে ৫০% বোল ফাটলে প্রথম বার, বাকি ফলের ৩০% পরিপক্ব হলে দ্বিতীয় বার এবং অবশিষ্ট ফসল পরিপক্ব হলে শেষ অংশের তুলা সংগ্রহ করতে হবে।

রৌদ্রময় শুকনা দিনে বীজ তুলা উঠাতে হয়। ভালো তুলার সাথে যেন খারাপ তুলা (পোকায় খাওয়া, রোগাক্রান্ত) কখনো না মেশে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ভালো তুলা আলাদাভাবে তুলে ৩-৪ বার রোদে শুকিয়ে বস্তায় ভরে মাচা বা দানেস এর উপর সংরক্ষণ করতে হবে। ইঁদুর নষ্ট করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল করতে হবে।

৬. ডাল ও তেল ফসল

মসুর, ছোলা, মটর, মাসকালাই, মুগ, তিসি এ সময় পাকে। সরিষা, তিসি বেশি পাকলে রোদের তাপে ফেটে গিয়ে বীজ পড়ে যেতে পারে, তাই এগুলো ৮০ ভাগ পাকলেই সংগ্রহের ব্যবস্থা নিতে হবে।

ডাল ফসলের ক্ষেত্রে গাছ গোড়াসহ না উঠিয়ে মাটি থেকে কয়েক ইঞ্চি রেখে ফসল সংগ্রহ করতে হবে।

এতে জমির উর্বরতা এবং নাইট্রোজেন সরবরাহ বাড়বে।

এ সময় চর অঞ্চলে পেঁয়াজের সাথে বিলে ফসল হিসেবে বাদাম চাষ করতে পারেন।

৭. শাকসবজি

বেশি ফলন পেতে শীতকালীন শাকসবজি যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন, ওলকপি, শালগম, গাজর, শিম, লাউ, কুমড়া, মটরশুঁটি এসবের নিয়মিত যত্ন নিতে হবে।

টমেটো ফসলের মারাত্মক পোকা হলো ফলছিদ্রকারী পোকা। সমন্বিত বালাই দমন পদ্ধতিতে এ পোকা দমন করতে হবে।

এ সময় চাষিভাইরা টমেটো সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করতে পারেন। আধা পাকা টমেটোসহ টমেটো গাছ তুলে ঘরের ঠাণ্ডা জায়গায় উপুড় করে ঝুলিয়ে টমেটোগুলোকে পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।

পরবর্তীতে ৪-৫ মাস পর্যন্ত অনায়াসে টমেটো খেতে পারবেন। শীতকালে মাটিতে রস কমে যায় বলে সবজি ক্ষেতে চাহিদামাফিক সেচ দিতে হবে।

৮. গাছপালা

শীতে গাছের গোড়ায় নিয়মিত সেচ দিতে হবে। গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে এবং আগাছামুক্ত রাখতে হবে। সাধারণত এ সময় আমগাছে মুকুল আসে।

গাছে মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার আগে টিল্ট-২৫০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি অথবা ১ মিলি কনজা প্লাস অথবা ২ গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

আমের আকার মটরদানার মতো হলে গাছে ২য় বার স্প্রে করতে হবে এসময় প্রতিটি মুকুলে অসংখ্য হপার নিম্ফ দেখা যায়।

আম গাছে মুকুল আসার ১০ দিনের মধ্যে কিন্তু ফুল ফোটার পূর্বেই একবার এবং এর একমাস পর আর একবার প্রতি লিটার পানির সাথে ১.০ মিলি সিমবুস / ফেনম / ডেসিস ২.৫ ইসি মিশিয়ে গাছের পাতা, মুকুল ও ডালপাল ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।

৯. প্রাণিসম্পদ

শীতকালে পোল্ট্রিতে অপুষ্টি, রানীক্ষেত, মাইকোপ্লাজমোসিস, ফাউল টাইফয়েড, পেটে পানি জমা এসব সমস্যা দেখা যায়।

মোরগ-মুরগীর অপুষ্টিজনিত সমস্যা সমাধানে প্রাণিচিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন এ, সি, ডি, ই, কে ও ফলিক এসিড সরবরাহ করতে হবে।

শীতের তীব্রতা বেশি হলে পোল্ট্রি শেডে অবশ্যই মোটা চটের পর্দা লাগাতে হবে এবং বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

পোল্ট্রি লিটারে অ্যামোনিয়া গ্যাস রোধে ১ বর্গফুট জায়গায় ১ কেজি হারে অ্যামোনিল পাউডার মিশাতে হবে।

গোখামারে শীতকালে মোটা চটের ব্যবস্থা করা খুব জরুরি। নাহলে গাভীগুলো তাড়াতাড়ি অসুস্থ হয়ে যাবে।

১০. মৎস্যসম্পদ

পুকুরে পানি কমে দূষিত হয়ে যায় বলে শীতকালে মাছের বিশেষ যত্ন নিতে হবে। কার্প ও শিং জাতীয় মাছে ড্রপসি বা উদর ফোলা রোগ দেখা দেয়।

মাছের ক্ষত রোগ যাতে না হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। আর এ রোগের প্রতিকারে প্রতি কেজি খাদ্যের সাথে ১০০ মিলিগ্রাম টেরামাইসিন বা স্ট্রেপটোমাইসিন পর পর ৭ দিন খাওয়াতে হবে।

মাছ চাষ বিষয়ে যে কোন পরামর্শের জন্য কাছের উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *