মরিচের ফলন বৃদ্ধির উপায়
আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত মরিচের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু সেই অনুপাতে মরিচের ফলন বাড়ছে না। তাই আসুন জেনে নিই মরিচের ফলন বৃদ্দির উপায় এবং মরিচ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে।
আমাদের দেশে মরিচের যথেষ্ঠ চাহিদা রয়েছে। কারন, মরিচ ছাড়া রান্নাঅসম্পূর্ণ। আর মরিচের ভালো চাহিদা থাকায় কৃষকরাও মরিচ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। কিন্তু অনেক সময় আশানরূপ ফলন পাওয়া যায় না। আর এর একমাত্র কারণ হলো মরিচের সঠিক চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে না জানা। তাই চলুন জেনে নিই মরিচ চাষ পদ্ধতি ও মরিচের ফলন বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে।
আরোও পড়তে পারেন – মরিচের পাতা কোঁকড়ানো রোগের সহজ সমাধান
মরিচ চাষ পদ্ধতি
মরিচ চাষ যদি সঠিকভাবে করা হয় তাহলে অবশ্যই মরিচের ফলন দ্রুত বাড়বে। তাই মরিচের ফলন বৃদ্ধির জন্য প্রথমে মরিচের উচ্চফলনশীল জাত নির্বাচন করে মরিচ চাষের সঠিক সময় ও জমি এবং স্থান নির্বাচন করতে হবে। তারপর জমি তৈরী করে সঠিক ভাবে মরিচের চারা রোপন করে সার প্রয়োগ করতে হবে।
অতঃপর মরিচ গাছের যথাযথ পরিচর্চা নিতে হবে এবং সময়ে সময়ে জমিতে সেচ দিতে হবে। অর্থাৎ মরিচ চাস পদ্ধতি সঠিক হলে মরিচের ফলন দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও টবেও মরিচ চাষ করা যায়। তাই আসুন জেনে নিই মরিচ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে।
আরোও পড়ুন – মরিচের সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা
মরিচ চাষের জলবায়ু এবং সময়
সাধারণত জুলাই মাসে মরিচ রোপণ বা চাষ করলে সবচেয়ে বেশি ফলন পাওয়া যায়। তবে সারা বছরই মরিচের চাষ করা যায়। কারণ, মরিচ একটি বারোমাসি ফসল। মাঝারি থেকে উচ্চ তাপমাত্রায় (২৪-৩০ ডিগ্রী সে.) এবং যেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১৫ সেন্টিমিটার সেখানে মরিচ ভালো হয়।
মরিচ চাষের মাটি ও জমি নির্বাচন
মরিচ চাষের মাঝারি বা উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে। আর মরিচ দোআঁশ বা বেলে মাটিতে খুব ভালো জন্মে। তবে অম্ল জাতীয় মাটি ছাড়া সব মাটিতে মরিচের ভালো ফলন হয়।
মরিচ চাষের পূর্বে মরিচের চারা গাছ বা বীজ সংগ্রহ
আমাদের আশেপাশে শহরে বা গ্রামে বর্তমানে ভালো নার্সারি রয়েছে। এসব নার্সারীতে উন্নত ও ইচ্চফলনশীল জাতের মরিচের বীজ, কলম ও চারা পাওয়া যায়। অথবা পাশবর্তী কৃষি সম্প্রসারণ অফিসে যোগাযোগ করে মরিচ গাছের চারা সংগ্রহ করতে হবে।
মরিচ চাষের জমি তৈরী
মরিচ চাষের পূর্বে ভালোভাবে নিড়ানি বা লাঙ্গল অথবা মই দিয়ে জমির মাটি ঝুরঝুরে করে জমি তৈরী করলে মরিচের অধিক ফলন হয়। আরমরিচ চাষের জমিতে অবশ্যই পানি নিষ্কাশন ও সেচের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
মরিচ চাষের পূর্বে মরিচের চারা গাছ বা বীজ সংগ্রহ
আমাদের আশেপাশে শহরে বা গ্রামে বর্তমানে ভালো নার্সারি রয়েছে। এসব নার্সারীতে উন্নত ও ইচ্চফলনশীল জাতের মরিচের বীজ, কলম ও চারা পাওয়া যায়। অথবা পাশবর্তী কৃষি সম্প্রসারণ অফিসে যোগাযোগ করে মরিচ গাছের চারা সংগ্রহ করতে হবে।
আরোও জানতে পারেন – মরিচ চাষ পদ্ধতি
মরিচ চাষের জমিতে সার প্রয়োগ (হেক্টর প্রতি)
গোবর | ১০ টন (জমি তৈরির সময় দিতে হবে) |
ইউরিয়া | ২৫০ কেজি (চারা রোপণের ২৫ দিন পর ৮০ কেজি এবং বাকি সার ৫০ ও ৭০ দিন পর পর ৮৫ কেজি করে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। |
টিএসপি | ২০০ কেজি (জমি তৈরির সময় দিতে হবে) |
এমওপি | ১৫০ কেজি (জমি তৈরির সময় ৫০ কেজি এবং চারা রোপণের ২৫ দিন পর ৪০ কেজি এবং চারা রোপণের ৫০ ও ৭০ দিন পর পর ৩০ কেজি করে উপরি প্রয়োগ করতে হবে)। |
আরোও জানুন – বারি সরিষা-১৪ চাষ পদ্ধতি
মরিচের চারা গাছ বপন বা রোপন পদ্ধতি
- মরিচের চারা গাছ জমিতে রোপনের পূর্বে জমিতে সামন্য পরিমাণে গর্ত করতে হবে।
- তারপর সেই গর্তে এমন ভাবে মরিচের চারা বপন করতে হবে যেন মরিচের চারাগাছ সোজা থাকে।
- এছাড়াও মরিচের চারা গাছ সোজা থাকার জন্য প্রয়োজনে একটি লাঠি গেরে চারা গাছের সাথে বেঁধে দিতে হবে।
- মরিচের চারাগুলো সারিবদ্ধবাবে রোপন করতে হবে।
- তারপর মরিচের চারাগাছের মাটিতে বিভিন্ন জৈব ও রাসায়নিক সার ও পর্যাপ্ত সার প্রয়োগ করতে হবে পরিমাণ মতো।
মরিচ চাষে মরিচ গাছের পরিচর্চা
- মরিচের ভালো ফলন পাওয়ার জন্য সবসময় মরিচ গাছের যত্ন নিতে হবে। তাই নিয়মিত মরিচ গাছের গোড়ার আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
- মরিচের চারা রোপণের সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে জমিতে যেন পানি জমে না থাকে।
- আর জমিতে অতিরিক্ত পানি জমে থাকলে তা খুব দ্রুত নিষ্কাশন করতে হবে।
- নিয়মিত মরিচ চাষের জমিতে সেচ দিতে হবে।
আরোও পড়তে পারেন – শসা চাষ পদ্ধতি ও রোগ বালাই দমন ব্যবস্থাপনা
মরিচের রোগ-বালাই দমন
মরিচ চষের ক্ষেত্রে মরিচের অনেক রোগ দেখা যায়। যেমনঃ মরিচের পাতা কোঁকড়ানো রোগ। তাই মরিচের কোন রোগ দেখা দেখা দিলে অবশ্যই কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে যোগাযোগ করুন। নিম্নে মরিচের কিছু রোগ সম্পর্কে দেওয়া হলোঃ-
১. মরিচের ড্যাম্পিং অফ রোগ
এই মরিচের ড্যাম্পিং অফ রোগের লক্ষণ হলো মরিচ গাছ চারা অবস্থায় চারার গোড়া পচে যায়। এই রোগের প্রতিকার হলোঃ-
ডায়াথেন এম-৪৫ (২ গ্রাম/কেজি) দিয়ে শোধন করা বীজ বপন করলে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
আরোও পড়ুন – মাসকলাই চাষ পদ্ধতি
২. মরিচের এনথ্রাকনোজ/ মরিচ পঁচা রোগ
মরিচের এনথ্রাকনোজ/ মরিচ পঁচা রোগের লক্ষণ হলো মরিচ গাছের নতুন ডগা ও ফুলের কুঁড়ি আক্রান্ত হয়ে নুয়ে পড়ে এবং পরে শুকিয়ে যায়। এই রোগের প্রতিকার হলোঃ-
অটোস্টিন ২ গ্রাম অথবা কম্প্যানিয়ন ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
৩. মরিচের থ্রিপস্ পোকা
মরিচ গাছে থ্রিপস্ পোকা আক্রমণ করলে মরিচের পাতা কুঁকড়িয়ে যায় এবং এতে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এই পোকার দমন ব্যবস্থা হলোঃ-
ম্যালাথিয়ন ৫০ ইসি প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২৫ মিলি. হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে অথবা ইমিটাফ ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি. হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
আরোও পড়ুন – মিষ্টি আলু চাষ পদ্ধতি
৪. মরিচের মাইটস্ পোকা
মরিচের গাছে মাইটস্ পোকা আক্রমণ করলে মরিচের পাতার নিচে অনেক গুলো একসাথে মাকড়সার জালের মত স্তর তৈরি হয়। এই পোকার দমন ব্যবস্থা হলোঃ-
একামাইট ১০লিটার পানির সাথে ২০ মিঃলিঃ হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে অথবা সানমেকটিন্ ১০লিটার পানির সাথে ২০ মিঃলিঃ হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
৫. মরিচের এফিড/জাবপোকার ক্ষতির ধরণ
মরিচ গাছে এফিড বা জাবপোকা আক্রমণ করলে এটি মরিচের কচি পাতা ও পাতা থেকে রস চুষে খায়। এই পোকার দসন ব্যবস্থা হলোঃ-
ম্যালাথিয়ন ৫০ ইসি প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২৫ মিলি. হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে অথবা টাফগর ১০ লিটার পানিতে ২৫ মিলি. হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
আরোও জানতে পারেন – ক্ষেতে ক্ষেতে ফলছে স্বর্ণ, তরমুজের ব্যাপক ফলন | তরমুজ চাষে অধিক লাভ
এছাড়াও মরিচের ফলন বৃদ্ধির ও আরও উপায় হলো মরিচের চারা রোপণের পূর্বে মরিচের শিকড় সঠিকভাবে বিকাশের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ৫ মিলি মাইকোরিজা পানির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। কারণ, মরিচ গাছের শিকড়ের বিকাশ যত ভালো হবে মরিচ গাছের বিকাশ এবং উৎপাদন তত ভালো হবে।
কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ, ফসলের চাষ পদ্ধতি, সার প্রয়োগ এবং ফসলের বিভিন্ন রোগ বালাই সম্পর্কে জানতে নিয়মিত ভিজিট করূন Krishakbd.com
FAQs
মরিচ গাছ চাষের ক্ষেতে মরিচের চার রোপনের আগে ও পরে মরিচ গাছে গোবর সার, ভার্মি কোম্পস্ট কেঁচো সার, জৈব সার এবং রাসায়নিক সার দিতে হয়।
মরিচের ফলন বা উৎপাদন বৃদ্ধির উপায় হলো মরিচ চাষের জমিতে মরিচ গাছ সারিবদ্ধভাবে রোপণ করতে হবে এবং মরিচ গাছের নিয়মিত পরিচর্চা করতে হবে। এছাড়াও পুরানো খবরের কাগজ বা বর্জ্য কাগজ ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিয়ে মরিচ গাছের গোড়ার মাটির সাথে সেই কাগজের টুকরা গুলো ভালোভাবে মিমিয়ে দিলে মরিচের উৎপাদন বাড়বে।
সাধারণত কোন পোক বা কীটপতঙ্গ ও রোগের দ্বার মরিচ গাছ আক্রান্ত হলো মরিচ গাছের পাত ঝরে যায় এবং মরিচের পাতা কুঁকড়িয়ে যায়।