কিভাবে ভালো চারা বাছাই করতে হয় | ভালো চারাগাছ চেনার উপায়

সাধারণত চারা সংগ্রহের ক্ষেত্রে কোন নার্সারিতে গিয়ে আমরা প্রথমেই বলি যে, আমাকে ভালো একটি গাছ দিন! এবং এ কথা বলে বড়সড় একটি গাছ আশা করি। আর যদি গাছে ফুল-ফল থাকে তাহলে তো কথাই নেই! অনেকেই ভাবি পয়সা দিয়ে যখন কিনব তবে ছোট কেন বড় গাছই কিনি! এক্ষেত্রে যদি বিক্রেতা চারার দাম কিছুটা কম রাখেন তবে তো জিতে গিয়েছি ভেবে খুশিমনে গাছটি নিয়ে চলে আসি। আর অধিকাংশ ক্রেতার এমন মনোভাবের বিষয়টি বিক্রেতারা ভালো করেই জানেন!

ফলে তারাও হাসিমুখে দেখতে বেশ বড়সড় গাছটি ক্রেতার হাতে ধরিয়ে দেন। চারাটি কেনার সময় আমরা অনেকেই ভাবি না, গাছটির শিকড় মাটিতে চলে গিয়েছিল কি না, মাটি থেকে উঠানোর সময় শিকড় ছিড়ে গিয়েছিল কি না! চারাটি কোন জাতের কিংবা উৎকৃষ্ট মানের কিনা! ভালো চারা গাছ চেনার বিভিন্ন উপায় বা কৌশল রয়েছে। আজ আমরা উপায় বা কৌশল নিয়ে আলোচনা করবো।

আরোও পড়ুন – https://krishakbd.com/seeding-tree-planting-method/

কিভাবে ভালো চারা বাছাই করতে হয়

ভালো চারা মানে ভালো গাছ। চারা রোপনের আগে যদি সঠিক চারাটি সংগ্রহ করা যায় তাহলে বৃদ্ধি এবং ফলনও সন্তোষজনক হয়।

ভালো চারা গাছ চেনার বিভিন্ন উপায় বা কৌশল রয়েছে। ভালো চারাগাছ চেনার উপায় বা কৌশলগুলো হলো:

1. নার্সারিতে একই জাতের বিভিন্ন চারাগাছ থাকে। কিন্তু সবগুলোর বৃদ্ধি সমান হয় না। তাই যে গাছটির বৃদ্ধি ভালো হয়েছে এমন গাছটি দেখে নিতে হবে।
2. যে গাছের একটি শাখা লম্বা হয়ে উঠে গিয়েছে সেটি অবশ্যই নয়। কারণ এমন গাছ পরবর্তীতে ভালো Shape আনা খুব মুশকিল।
3. চারাগাছে ফুল বা ফল ধরা থাকলে মন সহজেই আকর্ষিত হয়। সে গাছটি নিতে আগ্রহ অনেক বেড়ে যায়। তবে লাগানোর জন্য ফুল ফলযুক্ত গাছ যথোপযুক্ত নয়! বাড়িতে গিয়ে লাগানোর পরপরই ঝরে যাবে সব ফুল ফল। এমনকি মারাও যেতে পারে গাছ। তাই ফুল ফলে গাছ ভরে থাকলে সে দিকে মনোযোগ না দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। বরং ফুল বা ফল আসতে শুরু করেছে কিংবা শীগ্রই ফল আসার নিশ্চয়তা দিবে এমন গাছ নিতে পারেন।
4. যে চারাগাছটি কিনবেন তার উচ্চতা ২ থেকে ৩ ফুটের মধ্যে হতে হবে। এ উচ্চতার চারাগাছ সহজে মানিয়ে নিতে পারে।
5. গাছ টবে থাকুক বা প্যাকেটে থাকুক, শিকড় বেরিয়ে গেলে কাটা যাবে না। আর মূল শিকড়কে অবশ্যই খুব যত্ন করে রাখতে হবে। তাই গাছ তোলার সময় খেয়াল করুন পলিথিন বা প্যাকেট ভেদ করে মাটিতে শিকড় চলে গিয়েছে কি না! যদি গিয়ে থাকে তবে টেনে তোলার সময় শিকড় ছিঁড়ে যেতে পারে। তারপর বাড়িতে নিয়ে লাগালে গাছটি মরে যেতে পারে। আবার মূল শিকড় বাইরে বার হয়ে গিয়েছিল আর তা কেটে দেয়া হয়েছিলো এমন চারাগাছও কিন্তু চলবে না! তবে গাছ প্যাকেটে থাকলে বড় প্যাকেটের গাছ নেয়া উত্তম।
6. চারাগাছ কেনার সময় খেয়াল করুন গাছের গোড়াটা একটু মোটা ও সবল কি না। যা মাটিতে আঁকড়ে থাকে শক্তভাবে। অনেকসময় বিক্রেতা নতুন লাগানো গাছকে পুরোনো বলে চালিয়ে দিতে চায়। তাই গাছের ডাল ধরে আলতো করে ঝাঁকি দিয়ে দেখুন গাছের গোড়ায় মাটি শক্ত করে ধরে আছে কি না! গোড়া শক্ত হলে কিছু হবে না, আর নতুন মাটিতে বসানো হলে সহজেই খুলে আসবে।
7. ফলের চারা কেনার সময় চারা যেন বীজ থেকে তৈরি না হয় সেটিও নিশ্চিত হতে হবে। কারণ, বীজের চারা থেকে ভালো ফলন আশা করা বৃথা। তাই বীজের চারাকে যেন বিক্রেতা কলম বা গ্রাফটিং বলে চালিয়ে দিতে না পারেন সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।
8. বীজ থেকে উৎপাদিত চারাগাছের গোড়ায় থাকবে বীজের মরে যাওয়া অংশ। গাছটি গোড়া থেকে সমান্তরালে উপর দিকে ক্রমশ সরু হতে থাকবে। পাতা হবে সবুজ। অপরদিকে গ্রাফটিং করা বা কলমের চারায় দেখতে পাবেন গাছের গোড়া বা স্টক হবে সাধারণ গাছের আর উপরের দিক বা সায়ন হবে উন্নত গাছের।
9. গ্রাফটিং চারা চেনার সহজ উপায় হলো – গাছের গোড়ায় লক্ষ্য করলে দেখা যাবে দুটো গাছকে কেটে জোরা দেওয়া হয়েছে এবং জোরা দেওয়া স্থানে পলিথিন বা কাপড় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। আবার গ্রাফটিংয়ের কিছুটা উপর থেকে যেন গাছের ডালপালা শুরু হয় সেটিও খেয়াল করতে হবে।
10. গ্রাফটিং না হলে দেখুন চারাটি গুটিকলমের কি না। গুটিকলম হলেও জাত ভালো হবে। এক্ষেত্রে করণীয় হলো ভালো করে দেখে নেওয়া কলমে শিকড় এসেছে কি না! আর যদি ফলফুল থাকে তবে ধরে নিন এটি গুটি কলম। কারণ, বীজের গাছ এতো মোটাও হবে না, বা এত তারাতাড়ি ফলও আসবে না। গুটিকলমে শিকড় দেখা না গেলে বিক্রেতাকে মাটি ভেঙে শিকড় দেখাতে বলতে পারেন।
11. চারাগাছ কেনার সময় ভালো করে দেখে নিতে হবে গাছটি রোগাক্রান্ত কি না। যেমন পাতা শুকনো কিনা, কুঁকড়ানো কি না, পাতার উপর নিচে কোনো পোকামাকড় আছে কি না! কোনো দাগ আছে কি না তাও দেখে নেওয়া চাই। না হলে গাছের ক্ষতি তো হবেই এটি গিয়ে আপনার বাগানের অন্য গাছেও রোগ ছড়াবে।
12. ফুল ফল গাছের চারা কেনার সময় গাছের পাতার উপরিভাগে ভালো করে দেখে নিন অগ্রমুকুল ঠিক আছে কি না। না হলে নতুন ডাল গজাতে বা পাতা আসতে সময় বেশি নিতে পারে।
13. মৌসুমি ফুলের চারা কিনতে হলে অবশ্যই ফুলসহ গাছ কেনা থেকে বিরত থাকুন। সর্বোচ্চ কলিসহ চারাগাছ নিতে পারেন। যদি ফুলসহ গাছ পছন্দ করে থাকেন তবে দেখা যাবে ফুল সব নার্সারিতেই ফুটে গেছে আপনার কাছে আছে শুধুই গাছ আর পাতা।
14. বীজতলা থেকেও তুলে আনা চারাগাছের শিকড় অক্ষত আর চারা যেন থাকে সবুজ ও তাজা সেদিকে খেয়াল রাখুন। আবার পাতার বৃদ্ধিও হতে হবে আশানুরূপ।

আরও পড়ুন

• ছাদ বাগানে সবজি চাষ
• কোন মাসে কোন সবজি চাষ করতে হয়