জুন মাসে কি কি সবজি চাষ করে ভালো লাভ করা যায়
জুন মাসের আবহাওয়া সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। আর এই মাসে ফসলের অধিক উৎপাদন হয়। তাই জানুন জুন মাসে কি কি সবজি চাষ করে অধিক লাভ করা সম্ভব সে সম্পর্কে।
জুন মাস থেকে সাধারণ বর্ষাকাল শুর হয়। তাই জুন মাসকে বর্ষার মাসও বলা হয়। আর আমরা সবাই জানি যে, বর্ষাকালে কোনো ফসল চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। আর বেশিরভাগ ফসলই বর্ষাকাল বা জুন মাসে চাষ করা হয়ে থাকে। আর এই জুন মাসের আবহাওয়া ও মাটি ফসল চাষের জন্য খুবই উপর্যুক্ত। যার কারণে জুন মাসে ফসল চাষ করলে ফসলের ফলন ভালো হয়। তাই দেখা যায় অন্যান্য সময় এর থেকেও কৃষক ভাইরা এই বর্ষাকালে বা জুন মাসে ফসল চাষে বেশি ব্যস্ত থাকে। আসুন জেনে নেওয়া যাক জুন মাসে কি কি সবজি চাষ করে ভালো লাভ করা যায় সে সম্পর্কে।
আরোও পড়তে পারেন – ফেব্রুয়ারী মাসের সবজি চাষ
জুন মাসে যেসব সবজি চাষ করা যায়
বেশিরভাগ ফসলই জুন মাসে চাষ হয়ে থাকে। কারণ, এই মাসের আবহাওয়া ফসল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তাই জানুন এই জুন মাসে কি কি ফসল চাষ হয়ে থাকে।
জুন মাসে যেসব ফসল চাষ হয় সেগুলো হলোঃ- ধানের মধ্যে (আউশ ধান, আমন ধান, বিআর-১০, ব্রি ধান-৩০,৩২,৩৩,৩৪,৩৮,৩৯,৬২,৭১,৭২,৭৫,৭৯,৮০,৮৭,৯০,৯১,৯৩,৯৪,৯৫,১০৩, ব্রি হাইব্রিড ধান-৪,৬, বিনা ধান-৭,১১,১৬,১৭,২২,২৩ প্রভৃতি), ভুট্টা, পাট, শাকসবজির মধ্যে ডাঁটা, গিমাকলমি, পুঁইশাক, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, ঝিঙা, শসা, ঢেঁড়স, বেগুন ইত্যাদি।
জুন মাসে আউশ ধান চাষ করে অধিক লাভ করার উপায়
জুন মাসে আউশ ধান চাষ করা ক্ষেতে ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং আউশ ধানের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য যত্ন নিতে হবে। এছাড়াও জুন মাসে আমন ধান চাষ করার ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে আউশ ধানের যেন সমন্বিত রোগ-বালাই ব্যবস্থাপনা করা হয়।
আর জুন মাসে বন্যার আশঙ্কা থাকলে আগাম আউশ ধান রোপণ করে শতকরা ৮০ ভাগ ধান পাকলেই প্রয়োজনীয় কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহার করে ধান কেটে মাড়াই-ঝাড়াই করে শুকিয়ে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: জুলাই মাসে কি কি সবজি চাষ করা যায়
জুন মাসে আমন ধান চাষ করে অধিক লাভ করার উপায়
আমন ধানের বীজতলা তৈরির করার মূল সময় হলো জুন মাস বা বর্ষার শুরুতে। আমন ধান চাষ করার জন্য পানিতে ডুবে না এমন উঁচু খোলা জমি নির্বাচন করে বীজতলা তৈরি করতে হবে। তারপর আমন ধান চাষ করার পদ্ধতি অনুসরণ করে জুন বা আষাঢ় মাসে আমন ধান চাষ করতে হবে। আর এর
জন্য আমন ধানের চাষের সময় হেক্টর প্রতি জমিতে ৯০ কেজি টিএসপি, ৭০ কেজি এমওপি, ১১ কেজি দস্তা এবং ৬০ কেজি জিপসাম দিতে হবে। আর জুন মামে বা বর্ষার দিনে আমন ধান চাষ করার জন্য জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য জমির এক পাশে একটি ছোট পুকুর খনন করতে হবে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য। এভাবে নিয়ম মেনে জুন মাসে আমন ধান চাষ করলে অধিক ফলন পাওয়া সম্ভব।
আরোও পড়ুন – মাসকলাই চাষ পদ্ধতি
জুন মাসে ভুট্টা চাষে অধিক লাভ
জুন মাসে ভুট্টা চাষ করলে তা পরিপক্ব হওয়ার পর বৃষ্টিতে যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য আগে মোচা সংগ্রহ করে ঘরের বারান্দায় ভুট্টা সংগ্রহ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ভুট্টার মোচা থেকে ভুট্টার দানা সংগ্রহ করতে প্রয়োজনে ভুট্টা মারাই যন্ত্রের ব্যবহার করা যেতে পারে। রোদ হলে ভুট্টা শুকিয়ে নিতে হবে। আর ভুট্টার মোচা পাকতে দেরি হলে মোচার আগা চাপ দিয়ে ভু্ট্টার মোচাকে মুখী করে দিতে হবে। এতে করে জুন মাসের বৃষ্টিতে ভুট্টার মোচা নষ্ট হবে না।
আরোও জানতে পাারেন – সবচেয়ে লাভজনক ফল চাষ
জুন মাসে পাট চাষে অধিক লাভ
জুন মাসে পাট চাষ করে পাট গাছের বয়স যখন চারমাস হবে তখন ক্ষেতের পাট গাছ কেটে নিতে হবে। পাট গাছ ক্ষেত থেকে কাটার পর চিকন ও মোটা গাছ গুলো আলাদা করে আঁটি বেঁধে ২/৩ দিন দাঁড় করিয়ে রাখতে হবে। তারপর পাট গাছ থেকে পাতা ঝরে গেলে ৩/৪ দিন পাট গাছগুলোর গোড়া একফুট পানিতে ডুবিয়ে রাখার পর পরিষ্কার পানিতে জাগ দিতে হবে। এরপর পাট পঁচে গেলে পানিতে আঁটি ভাসিয়ে পাটের আঁশ ছাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে্ এরপর বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে জুন মাসে পাট চাষ করে অধিক লাভবান হওয়া যায়।
জুন মাসে মুখী কচু চাষে অধিক লাভ
জুন মাসে এসব সবজি চাষ করার সময় সবজির গোড়ার আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে এবং প্রয়োজনে সবজির গোড়ার মাটি তুলে দিতে হবে। এ ছাড়াও বন্যা বা জলবদ্ধতার পানি সহনশীল লতিরাজ কচুর আবাদ করা যেতে পারে এই জুন মাসে। জুন বা আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে উপকূলীয় অঞ্চলে ঘেরের পাড়ে গিমাকলমি ও অন্যান্য ফসলের আবাদ করা যেতে পারে, তবে সেক্ষেত্রে সবজি ক্ষেতে পানি জমতে দেয়া যাবে না। আর যদি পানি জমে যায় সেক্ষেত্রে সরানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
আরোও জানুন – জৈব ও অজৈব সারের পার্থক্য
আর এই জুন মাসে মুখী কচু জমিতে লাগানো খুবই দারুন উপায়। এই মাসেই কচুর উৎপাদন বেশি হয়। মুখী কচুর পুরো উৎপাদন হওয়ার জন্য এই বর্ষার মৌসুমে ৪-৬ বার আগাছা দমন করতে হয়। অনুমোদিত মাত্রায় আগাছানাশক মুখী কচুর বীজ বপনের পরপর স্প্রে করতে হবে এবং চাষের দুই মাস পর হতে এক মাস পর পর ৪বার নিড়ানি দ্বারা আগাছা দমন করতে হবে। বিশেষ করে সারের উপরিপ্রয়োগের আগে মুখীকচুর আগাছা দমন আবশ্যক। তাহলেই মুখী কচুর উৎপাদন জুন মাসে বেশি হবে। আর মুখী কচু উৎপাদনে মাটিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে সেক্ষেত্রে মুখী কচুর প্রাথমিক বৃদ্ধি পর্যায়ে মাটির প্রকারভেদ অনুযায়ী ১০-২০ দিন পরপর সেচ দিতে হবে। জুন মাসে মুখী কচু রোপণের ৪০-৪৫ দিন পর এবং ৯০-১০০ দিন পর দুই সারির মাঝের মাটি কুপিয়ে ঝুরঝুরে করে দিয়ে কচু গাছের গোড়ায় উঠিয়ে দিলে কচুর ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব।
জুন মাসে বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি চাষ করে অধিক লাভ করার উপায়
জুন মাস হলো বৃষ্টির মাস। আর এই মাসে প্রায় সব ধরণের শাক-সবজি চাষ করা হয়ে থাকে এবং এই মাসে শাক-সবজি চাষ করে কৃষকরাও অন্যান্য সময়ের তুলনায় অধিক লাভবান হয়ে থাকে। জুন মাসে যেসব শাক-সবজি চাষকৃত বা উৎপাদিত সেগুলো হলো ডাঁটা, গিমাকলমি, পুঁইশাক, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, ঝিঙা, শসা, ঢেঁড়স, বেগুন ইত্যাদি।
জুন মাসে বিভিন্ন ধরণের উপকারী গাছপালা রোপন করে অধিক লাভ করার উপায়
জুন মাস হলো চাষের মাস। এই যত বেশি চাষ করা যাবে ততই লাভ। তাই বিভিন্ন ধরণের উপকারী বা পরিবেশ বান্ধব এবং দামী গাছ রোপন করা যেতে পারে। কারণ, জুন মাসে বৃষ্টি হওয়ার কারণে মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে রস ও পুষ্টি থাকে। ফলে গাছপালাও ভালো জন্মে এই মাসে।
আরোও পড়তে পারেন – অল্প খরচে ভূট্টা চাষ জানবো ভূট্টা চাষের সঠিক নিয়ম
পরিশেষে বলা যায়, জুন মাস কৃষকের জন্য খুবই উপকারি একটি মাস। কারণ, এই মাসে তারা বিভিন্ন ধরণের ফসল উৎপাদন করে অধিক লাভবান হন। তবে জুন মাসে ফসল চাষ করার জন্য একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, তা হলো ফসল চাষের জন্য উঁচু জমি নির্বাচন।
FAQs
জুন মাসে ডাঁটা, গিমাকলমি, পুঁইশাক, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, ঝিঙা, শসা, ঢেঁড়স, বেগুন ইত্যাদি চাষ করা যায়।
মার্চ. এপ্রিল এবং জুন মাসে সবজি চাষ করা ভালো।
না বাঁধাকপি শীতকালীন সবজি।
জুন মাসে কসমস বীজ বপন করা যাবে, তবে মার্চ-এপ্রিল মাসে কসমস বীজ বপন করলে ভালো।